Loading...

দেশ সেরা ফুড ব্লগারদের গল্প

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০

আদনান ফারুক হিল্লোল – অভিনেতা থেকে ফুডব্লগার 

 

একটা সময় ছিল যখন তিনি ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা। নাটক ও চলচ্চিত্রে কাজের মাধ্যমে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছিলো সারা দেশে। তবে এখন নাটকে তাঁকে খুব কম দেখা গেলেও, ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষের জীবনে তিনি উপস্থিত রয়েছেন ঠিকই। তবে এটি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন গল্প।

 

অভিনেতা থেকে ইউটিউবার হয়েছেন আদনান ফারুক হিল্লোল। তিনি এখন ইউটিউবের একজন নিয়মিত ফুডব্লগার, যিনি শুধু সারা বিশ্বের বাঙালিদের মধ্যেই নয়, বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।

 

কোন বিষয়টি তাঁকে উৎসাহিত করলো ফুডব্লগার হতে?

 

“আমি আমার জীবনে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছি। আমি গিয়েছি, অভিনয় করেছি এবং কিছু টাকা নিয়ে ফিরে এসেছি। কিন্তু সেসব কাজে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক অধিকার আমার ছিল না। একটা পর্যায়ে এসে আমি ভেবেছি আমাকে এমন কিছু করতে হবে যা আমার নিজের পরিচয় তৈরি করবে এবং আমার এতে সম্পূর্ণ অধিকার থাকবে,” হিল্লোল আরও বলেন, “এসব চিন্তা করে, আমি ফুডব্লগিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি খেতে উপভোগ করি এবং এটিই আমাকে এইদিকে পরিচালিত করেছে।”

 

তিনি ২০১৭ সালে তার প্রজেক্ট শুরু করেন। হিল্লোলের একটি পুরানো ডিএসএলআর ক্যামেরা ছিল, যা দিয়ে তিনি ‘আদনান ফারুক’ নামে তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের জন্য একবারে চারটি পর্ব রেকর্ড করেন। পরে সারা বছর ধরে এসব ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। ইতোমধ্যে তার অনুষ্ঠান ‘ডাইন আউট উইথ হিল্লোল’ দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

 

ভিডিওগুলো আপলোড করার সময়, হিল্লোল লক্ষ্য করেন যে ইউটিউবে বাংলায় বেশি ফুডব্লগিং ভিডিও নেই। বিদেশ থেকে মাত্র হাতেগোনা কয়েকজনই এটা করছিলেন। ফলস্বরূপ, হিল্লোলের ভিডিওগুলি ভিউ পেতে শুরু করে এবং এটি তার আগ্রহকে বাড়িয়ে দেয়। পরে ২০১৮ সালে, তিনি আরও গুরুত্ব সহকারে ফুডব্লগিং শুরু করেন।

 

“এখন, যখন আমি বিদেশে থাকি, মানুষ এসে আমার সাথে কথা বলে কারণ তারা আমাকে চেনে। আমি এতদিন নাটকে অভিনয় করছি, কিন্তু তখন আমাকে তেমন কেউ চিনতে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গের দর্শকেরাও আমার প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে। তারা ইউটিউবে চমৎকার সব মন্তব্য করে এবং এটি আমাকে অনুপ্রাণিত করে।”

 

হিল্লোলের চ্যানেল, “ডাইন উইথ হিল্লোল” – এ সাত লাখেরও বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এবং তার ভিডিওগুলো এক মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে৷ যদিও তিনি শুরু করার সময় স্পনসর পাননি, কিন্তু এখন সেগুলোও পাচ্ছেন। তিনি প্রায় নিয়মিত বিভিন্ন কোম্পানির সাথে কাজ করছেন।

 

হিল্লোল বলেন, “আমি আমার চ্যানেল শুরু করার পর থেকে আমার আয় বেড়েছে, কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এখন আমার আরও বেশি সৃজনশীল স্বাধীনতা আছে,” হিল্লোল বলেন।

 

“যখন আমি অভিনয় করতাম, আমাকে পরের মাসের আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তা করতে হতো। আমি কত দিন শুটিং করব এবং কত টাকা উপার্জন করব সে সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত ছিলাম না। কিন্তু এখন, আমার আয় নির্ভর করে আমার ভিডিওর সংখ্যার উপর। পরের মাসে যদি আমার আরও বেশি অর্থের প্রয়োজন হয়, আমি আমার প্রকাশ করা ভিডিওর সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারি। এটি আমার নিজস্ব চ্যানেল, এখানে আমার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে এবং আমাকে অর্থের জন্য কারো উপর নির্ভর করতে হয় না।”

 

সম্প্রতি, হিল্লোলের আমন্ত্রণে পশ্চিমবঙ্গ থেকে একজন জনপ্রিয় কমেডিয়ান ও ফুডব্লগার মীর আফসার আলী (ফুডকা) বাংলাদেশে এসেছেন। তারা দেশের বিভিন্ন ধরনের খাবার অনুসন্ধান করেছেন। একইভাবে ঈদের আগে হিল্লোলকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে তিনি তার ফুডব্লগিং অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কথা বলার পাশাপাশি নতুন জায়গায় ফুডব্লগিং উপভোগও করেছেন।

 

সবশেষে, একটি সফল ফুডব্লগিং ক্যারিয়ারের পরেও, হিল্লোল অভিনয় পুরোপুরি ছেড়ে দেননি। সম্প্রতি বিটিভিতে একটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। এখনও সুযোগ পেলেই তিনি অভিনয় করার চেষ্টা করেন।