Loading...

নিজেকে ক্লাউড কিচেন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন উম্মে হুমায়রা পাপিয়া

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০

নিজেকে ক্লাউড কিচেন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন উম্মে হুমায়রা পাপিয়া

উম্মে হুমায়রা পাপিয়া। একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকুরির পাশাপাশি শুরু করেছেন নিজস্ব ক্লাউড কিচেন পাপিয়া’স কিচেন। নিজের উদ্যোক্তা জীবনের শুরু, সাফল্য, সেই সাথে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ; সবকিছু নিয়ে কথা বলেছেন পুষ্টি হোম শেফ এর সাথে।

 

আপনি দেশের একজন তরুণ উদ্যোক্তা। উদ্যোক্তা হওয়ার জার্ণিটা সম্পর্কে কিছু বলুন? 

ছোটোবেলা থেকেই মা-নানীর রান্না ও তাদের রান্নার প্রশংসা দেখে এসেছি, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতে গিয়েই আমার রান্নার হাতেখড়ি। তখন ফেসবুক ইউটিউবের যুগ ছিল না; রান্নার বই, টিভি অনুষ্ঠান কিংবা পত্রিকার রেসিপিই ছিল নতুন কিছু চেষ্টা করার উৎস। যখনই নতুন কোনো রেসিপি দেখে ভালো লাগতো মা’কে বলতাম উপকরণগুলো জোগাড় করে দাও আমি বানিয়ে দেখি, আর বানানোর পর সবার কাছ থেকে পেতাম অঢেল প্রসংসা।

 

কেমন ছিলো শুরুটা? কেন নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কথা ভাবলেন?

 

একদিন ফেসবুক স্ক্রোল করতে গিয়েই দেখা পাই ফুডপান্ডার হোমশেফ সেগমেন্টটি। ভাবলাম নিজের রান্নার এক্সপেরিয়েন্স এতোটা খারাপ নয়, রান্না করে সবসময় ভালো প্রশংসাই পেয়েছি, তাই ঝটপট রেজিস্ট্রেশন করে ফেলাম। কোভিডের আক্রমণে জেলায় জেলায় যানবাহন বন্ধ হলো, রাস্তার বের হওয়া বন্ধ হলো, সদ্য পাওয়া চাকরীতেও জয়েন করতে পারিনি। এমন প্রয়োজনের মুহূর্তে ফুডপান্ডা থেকে সাড়া পেয়ে শুরু করে দিলাম আমার পাপিয়া’স কিচেনের যাত্রা।

 

শুরুর দিকে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ কী ছিলো? 

যখন আমি পাপিয়া’স কিচেন শুরু করি, তখন আমি আরও কয়জনের সাথে শেয়ারে থাকতাম। রান্নাঘর সবসময় খালি পেতে বেগ পেতে হতো, কিন্তু খাবার একেবারে ফ্রেশ সার্ভ করতে হবে। সকালেই আমি রান্নার প্রিপারেশন নিয়ে রাখতাম যেন অর্ডার আসলেই তাড়াতাড়ি খাবার তৈরি করে ডেলিভারি দিতে পারি। একদিনের উপকরণ আমি অন্য দিন ব্যবহার করতাম না। মাঝে মাঝে এমন হতো যে আশানুরূপ অর্ডার আসেনি তখন সেদিনের তৈরি করা খাবারগুলো ফেলে দিতে হতো। তবু আমি কখনও বাসি খাবার সার্ভ করিনি। এছাড়াও বাজার করা থেকে খাবার তৈরি করা সব একা হাতে করেছি।

 

ফুড স্টার্টআপই কেন? অন্যসব স্টার্টআপের চেয়ে ফুড স্টার্টআপ কতোটা চ্যালেঞ্জিং?  

ফুড স্টার্টাপ বেছে নেওয়ার পেছনের কারণ হলো আমি রান্না করতে পছন্দ করতাম। আর রান্না-বান্নায় আমার কনফিডেন্স  ছিলো যে এই জিনিসটা আমি ভালো পারি, তাই আসলে এটাকে বেছে নেওয়া।

 

আপনার ফুড স্টার্টআপের কারেন্ট চ্যালেঞ্জ/লক্ষ্যগুলো কী কী? 

সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ কোয়ালিটি মেইন্টেইন করা। আরেকটা জিনিস হলো দ্রুত ডেলিভারি। তবে আশার কথা আমি এখন পর্যন্ত আমার খাবারের কোয়ালিটি ধরে রেখেছি। ঠিক এ কারণেই আমার প্রতিটি কাস্টমার পরবর্তীতে আবারও অর্ডার করে থাকে।

 

অনলাইনে সেল করতে কোন কোন প্লাটফর্ম ব্যবহার করেন? 

আমি মূলত ফুডপান্ডা অ্যাপের হোমশেফে রেজিস্ট্রেশন করে শুরু করি। বর্তমানে আমার একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে যেখান থেকে আমি ভালোই অর্ডার পাই। আমি কোনো পেইজ এখনও ওপেন করিনি কারণ একা সবকিছু সামলানো কিছুটা কঠিন। 

 

একটি ফুড স্টার্টআপ শুরু করার পরিকল্পনাটা কেমন হওয়া উচিত? 

প্রথমেই ঠিক করতে হবে আমার সবচেয়ে সুস্বাদু রান্না কোনটি। এরপর কাস্টমার কি ধরণের খাবার পছন্দ করেন, আমি কোন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্ডার নেবো এবং ডেলিভারি করবো, রান্নার উপকরণগুলো কোত্থেকে নেবো, এসব জিনিস ঠিক করে নিতে হবে। সবশেষে মূল্য নির্ধারণ যা ক্রেতা বিবেচনা করে বের করতে হবে। এইগুলোর সমন্বয়েই তৈরি করা যাবে নতুন একটি ফুড স্টার্টআপ।

 

কখনো হতাশা গ্রাস করেছে কিনা? সেক্ষেত্রে কীভাবে হতাশা কে জয় করেছেন? নিজেকে মোটিভেট করেন কীভাবে? 

হতাশা গ্রাস করেনি, তবে অনেকগুলো প্রব্লেম ফেইস করেছি। কোনো হেল্পিং হ্যান্ড ছাড়া বা বড়ো কোনো ইনভেস্টমেন্ট না থাকায় শুরু দিকে আমি বড়ো বড়ো অর্ডারগুলো নিতে পারিনি। তবে এখন আর তেমন কোনো সমস্যা নেই।

 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 

কোভিডের পরবর্তী সময়ে আমি অফিসে যোগদান করায় রান্নায় পুরো সময়টা দিতে পারিনি। তবে আপাতত এটি পার্ট টাইম হিসেবে ধরে রেখেছি, তবে ভবিষ্যতে আরও বড়ো করতে চাই। ভালো একটা ইনভেস্টমেন্ট পেলে, পাপিয়া’স কিচেনকে একটা বড়ো ক্যাটারিঙে রূপান্তরিত করতে চাই, যেখানে কয়েকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

পুষ্টি হোম শেফ সম্পর্কে জানেন নিশ্চয়ই, পুষ্টি হোম শেফ নিয়ে কিছু কথা জানতে চাচ্ছি।   

এই প্ল্যাটফর্মটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, নতুন রান্নার প্রতি আগ্রহীদের ঝোঁক বাড়াবে। একই প্ল্যাটফর্মে এতো ধরনের রেসিপি আর সুন্দর গুছানো একটি ওয়েবসাইট মানুষের মনে অনুপ্রেরণা যোগাবে নতুন কিছু করার।

 

যারা আপনার মতো ফুড স্টার্টআপ দাঁড় করাতে চায় তাদের জন্য কোনো পরামর্শ? 

কাজটার প্রতি ভালোবাস এবং একাগ্রতা থাকতে হবে। থাকতে হবে সততা। আমি নিজে যে খাবারটি পছন্দ করবো কাস্টমারকে যেন সেটিই দিই। আরেকটা জিনিস, হাল ছাড়া যাবে না। বাধাগুলো কে অনুপ্রেরণা ভেবে এগিয়ে যেতে হবে।